গাহি তাহাদের গান—
স্বাধীনতার লাগি যাহারা আনিল বিপ্লব অভিযান।
শ্রমহেতু চিরক্লান্তির লগনে যাহাদের পথচলা,
নবযুগের সূচনা আনে যাহাদের আনন্দ উচ্ছ্বলা।
রহস্য আস্বাদনে চাঁদে-মঙ্গলে যাহারা ছুটে চলে,
তটিনীর মতো অচিনপুরে হেলিয়া-দুলিয়া চলে।
মাটির চিবুকে আঘাত হানি সোনালি ফসল তোলে—
প্রভুর সৃষ্টি মহান।
যাহারা পথ-পল্লবে চিহ্ন অঙ্কে রেখে জীবনাদর্শ,
বীরবেশে রণভূমিতে করিয়াছে যুদ্ধ-সংঘর্ষ।
শ্বেতহস্তীর দল ছুটে যায় যেন মহাসর্বনাশে,
উন্মাদ যৌবন ছুটে চলে বনে-বাদাড়ে প্রাণনাশে।
আমি বিরহী কবি গাই সেই যৌবন-বিদিতের গান,
অকারণে যারা বারেবার আনে জীবনযুদ্ধের আহ্বান—
বক্ষেতে জাগায় প্রাণ।
অগ্নির কুন্তলা চুঁইয়ে যারা ছুটে চলে মরু-অভিযানে,
প্রতিকূল দেশে কিশলয় আনে ফসলের প্রাণে-প্রাণে।
প্রতীক্ষায় আছি—কবে আসবে সেই দিনবদলের পালা,
দোয়ারে এসেছে যৌবন—আজিকে যুদ্ধ-প্রাণের খেলা।
আঁয় ভাই-বোনেরা, সে যৌবন তেজে জাগাই মোরা প্রাণ,
হিংসা-বিভেদ ভুলিয়া গাহি সাম্যের গান—
সত্যের পথে অম্লান।
যাহারা ভিক্ষার ঝুলি স্কন্ধে তুলে সংসার ভুলে-ভালে,
মহান আদর্শে আত্মা আনে শপথের কোলাহলে।
তীর্থযাত্রায় দিনের হদিসে মঠে-মিনারে ছুটে চলে,
ধরণীর কিনারে ভগ্নস্তূপে তাহারাই আগুন জ্বালে।
স্বদেশের আপদে ব্যথিত চিত্তে তাহাদেরি অশ্রু ঝরে,
তাহাদেরি রুক্ষ আঘাতে বৈরী পালায় দেশ ছেড়ে—
সুমহান বলীয়ান।
যারা রোমান্টিক কাব্য শুচিত করে আধুনিকতা আনে,
আবিষ্কারের অমলিন চিন্তাবলে ধৈর্যের জাল বুনে।
অগ্নিস্নানে পবিত্রতা এনে আবর্জনা করে যায় দূর,
সমাজ সংস্কারে জড়িয়ে পড়ে ডেকে আনে নতুন ভোর।
কুহেলি ঘুচিয়ে বসন্ত এনে জাগায় প্রাণের সাড়া,
নতুন যুগের পূর্ণ বাসনায় মাতিয়ে তোলে ধরা—
অতুল তাহাদের সম্মান।
জীর্ণ বস্ত্রে কুঁড়েঘরে বসে সেজে কুপমণ্ডুক,
রহস্য উন্মোচনে স্তব্ধ—মাতাল সয় পেটের ভুখ।
পুস্তকের আলোয় সূর্য ঢালে, রাতকে করে দিন,
সরোবর ক্ষুদ্রেতে সমুদ্রের বারি আনে নিশিদিন।
মানবের কল্যাণে ছুটে চলে খনির গুহাগর্ভে,
কীর্তির নিশানা দিগন্তে উড়ায় আসি সগৌরবে—
তারাই জাতির প্রাণ।
অন্তিম বয়সে যাহাদের প্রাণে নবীন যৌবন তেজ,
স্মৃতির আবেগে কখনো ক্ষান্ত হয়নি সৃষ্টির কাজ।
মৃত্যু রহস্যের সম্মুখে দাঁড়ায় করে রহস্যাদন,
গড়ে মিনার পাহাড়সম, সাগরে নব নির্মাণ।
পৃথিবী-চন্দ্রে মহারন্ধ্রে করে মেধিকা দণ্ডমান,
ধরণীর প্রান্তে আলো ছড়ায় মানবকল্যাণে—
গড়ে সুখের স্থান।
প্রতিবাদের পূর্ণ মুকুটে গড়ে ‘কিশোর সংগঠন’,
নিঃস্বার্থ তেজে মেতিয়া আনে দেশের নব শাসন।
মদ-গাঁজা-জুয়া ভাঙচুর করে ঘুষের ভুঁড়ি গলায়,
নবযৌবনের রুধির ধারায় সত্যবাণী ছড়ায়।
ধরিত্রী কাঁপায় আকাশ-বাতাসে তোলে শঙ্খডাক,
ক্ষুধিত প্রতিবেশীর দুঃখ মোচনে চঞ্চল মায়া চোখ—
সদাই আকুল প্রাণ।
রক্ত-প্রাণের ডালায় ঢেলে যারা রক্ত করে কালা,
অত্যাচারীর বসতভূমিতে জ্বালে ভীষণ অগ্নিজ্বালা।
স্বদেশ ভূমিকে জাগিয়ে তোলে পুষ্পবাগের মেলায়,
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন দমায় বৃক্ষরাজির তালায়।
গড়ে অট্টালিকা, শহরের কোণে অন্ধ অভয়াশ্রম,
হাতুড়ির আঘাতে আগুন জ্বালে বহিয়া রক্তঘাম—
গড়ে উন্নত জীবন, নীরব এক মহাযজ্ঞ নাম।
ধর্মমন্ত্রে অসার ধরিত্রী যাহারা মাথায় কলরবে,
সহে তব লাঞ্ছনা যত পোকা-মাকড়ের উপদ্রবে।
সৃষ্টি মাঝে স্রষ্টাকে আনি মানবের দোয়ারে দোয়ারে,
ছুটে চলে দিনের দাওয়াতে—মরে অনাচারে।
জাগো কালাপাহাড়, সুলেমান বাদশা, জাগো মহামানব,
বান ডেকে ধুলিসাৎ করো যত নাস্তিক-নুস্তিক সব—
এনে দাও ধর্মাসন।
আপন স্বার্থ বিসর্জনে যারা সমাজের কল্যাণ আনে,
যুগে যুগে তারাই ভুগে মরিছে কারাগার বরনে।
অন্যায় রোধে অন্যায়ীর ফাঁদে পড়ে কোমল চলনে,
যার লাগি কাঁদে ধরিত্রী—তারে বজ্রাঘাতে হানে।
সে কোমলতা ছেড়ে আনো—দেখি রুক্ষ চলার গতি,
উন্মাদ ঘোড়ায় চাবুকের আঘাতে চালাও বসুমতী—
ক্ষত্রিয়েরই সম্মান, এই যৌবনের চূড়ান্ত জ্যোতি।